মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টার্গেট করে বাংলায় বিজেপি দলকে মানুষের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ । গতকাল বুধবার দিল্লিতে রাজ্যের চার জন বিজেপি নেতাকে ডেকে পাঠিয়ে এই নির্দেশ দিয়েছেন অমিত শাহ বলে জানা গেছে । কলকাতা থেকে প্রকাশিত ডিজিটাল আনন্দবাজারের খবর থেকে জানা যাচ্ছে গতকালের বৈঠকে দলের সভাপতি পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি দলের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন ।
সম্প্রতি শোভন –বৈশাখীকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরে যেভাবে প্রকাশ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি হচ্ছে তাতে বিরক্ত দলের সভাপতি বলে জানা গেছে । তিনি নাকি ওই চারজন রাজ্য নেতাকে বলেছেন , দলে নতুনরা আসবেন , তাদেরকে যথা যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে ।
জানা গেছে এই বৈঠকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায় এবং প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা বর্তমানে কেন্দ্রীয় সম্পাদক পদে থাকা রাহুল সিংহ উপস্থিত ছিলেন । বঙ্গ বিজেপির এই চার নেতাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। জে পি নাড্ডা দলের কার্যকরী সভাপতি হওয়ার পর থেকে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে এ ভাবে আলাদা করে বৈঠকে অমিত শাহ আর এক বারও বসেননি। তাই এই বৈঠকের দিকে উৎসুক নজর ছিল গোটা বাংলার রাজনৈতিক শিবিরের।
বুধবার রাত ৮টার পরে বাংলার নেতাদের নিয়ে অমিত শাহ বৈঠকে বসেছিলেন। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেননকেও সে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে অমিত শাহ বার্তা দেন, তৃণমূলকে ক্রমশ দুর্বল করা এখন বাংলায় বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ রাজ্যের এক শীর্ষ বিজেপি নেতার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে অমিত শাহ প্রশ্ন তোলেন বলেও খবর বিজেপি সূত্রের।
শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়েও বুধবার রাতের বৈঠকে কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দলে যোগ দেওয়ার সপ্তাহ দুয়েক কাটতে না কাটতেই বিজেপি ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন শোভনরা। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্তিমিত হয়েছে বটে। কিন্তু জটিলতা পুরোপুরি কেটে গিয়েছে, এমন নয়। অমিত শাহের সামনে বুধবার রাতে সে প্রসঙ্গ মুকুল রায়ই তোলেন বলে খবর। সে প্রসঙ্গেও সকলকে সঙ্গে নিয়ে এবং উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে কাজ করার কথাই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি দিয়েছেন বলে খবর।অমিত শাহ ঠিক কী বলেছেন, সে বিষয়ে মুকুল রায় মুখ খোলেননি। তবে তাঁর কথায়, ‘‘শোভন-বৈশাখী দলে ছিলেন এবং থাকছেন। সুতরাং সবাইকে সেই অনুযায়ীই চলতে বলা হয়েছে।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, তৃণমূলকে আক্রমণ করার কথা ভুলে বিজেপির রাজ্য নেতারা যে ভাবে অভ্যন্তরীণ গোলমালে জড়িয়েছেন, তাতে অমিত শাহ অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। বুধবারের বৈঠকে সে অসন্তোষ তিনি আর গোপন রাখেননি। পুরনো-নতুন দ্বন্দ্ব ভুলে সবাইকে নিয়ে চলার পরামর্শ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে আগেই দিয়েছিল দিল্লি। তৃণমূল বা অন্যান্য দল ছেড়ে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের উপযুক্ত স্থান দিতে হবে এবং কাজে লাগাতে হবে— এই বার্তাও দেওয়া হয়েছিল।
‘অনৈক্য’ নিয়ে অমিত শাহের অসন্তোষের বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত বিজেপি নেতারা কেউই মুখ খোলেননি এখনও। কিন্তু দিল্লি থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে মুকুল রায় বলেন, ‘‘অমিতজি আমাদের বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে পথে নামতে হবে, সর্বশক্তি দিয়ে মমতার বিরুদ্ধে পথে নামতে হবে।’’ মুকুলের এই মন্তব্যেই স্পষ্ট যে, বাংলায় বিজেপির ‘ঐক্যবদ্ধ’ চেহারা দেখতে চাইছেন দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব।
পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সঙ্ঘও। চলতি মাসের শুরুতেই কলকাতার সঙ্ঘ সদর দফতর কেশব ভবনে দিলীপ ঘোষ এবং সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। দল যখন বাড়ছে, তখন নেতৃত্বের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে ভগবত কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন বলেও সঙ্ঘ সূত্রে জানা গিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। কখনও শোনা গিয়েছে যে, মুকুল রায়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একটি অংশ। কখনও শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে প্রকাশ্যে কু-মন্তব্য করা হয়েছে। তাই এ বার হস্তক্ষেপ করেছেন খোদ অমিত শাহ। দলের মধ্যে কোনও অনৈক্য বরদাস্ত করা হবে না, সকলকে সঙ্গে নিয়ে এবং উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে কাজ করতে হবে, না হলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পদক্ষেপ করবে— এই রকম হুঁশিয়ারিই দিয়ে দেওয়া হয়েছে।