পুলিশ মহলে একটা সময় এরকমই গুঞ্জন প্রচলিত ছিল যে মির্জা হলেন মুকুলের লোক। মুকুল রায় তখন তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’। গত সাড়ে তিন বছরে নারদ-তদন্ত চলাকালীন সেই সমীকরণ একেবারেই উল্টে গিয়েছে। মুকুল এখন পদ্ম শিবিরের নেতা। আর মির্জা গিয়েছেন গারদে।
গত বৃহস্পতিবার মির্জাকে নারদ মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই। সে দিনই তারা আদালতে আর্জি জানিয়ে ওই পুলিশ কর্তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। মেয়াদ শেষ হতে সোমবার তাঁকে আদালতে ফের হাজির করানো হয়। আর সেখান থেকে বেরনোর সময়েই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মির্জা।
আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগে মির্জা বললেন, “সব সত্যি কথা বলে দিয়েছি। রেকর্ড হয়েছে। ভিডিয়োগ্রাফিও হয়েছে। তদন্ত চলছে। সব জানা যাবে। আইন আইনের পথে চলবে। বাদ-বাকি আপনারা জেনে যাবেন, কী হয়েছিল! সাড়ে তিন বছর ধরে মনের ভিতর বিভিন্ন জিনিস চেপে রেখেছিলাম। সবটা বলে ফেলে এই দু’তিন দিনে আমি অনেকটা হালকা বোধ করছি।’’
গত শনিবার নিজাম প্যালেসেই ডেকে পাঠানো হয়েছিল বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁদের দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়। ওই জেরার সময় মির্জার সরাসরি নিশানায় ছিলেন মুকুল রায়। একে অপরের দিকে তাঁরা অভিযোগের আঙুলও তোলেন। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় দু’জনের মধ্যে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে ওই জেরা পর্ব। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, জেরার সময় মির্জা দাবি করেন, মুকুল রায়ের কথায় তিনি টাকা নিয়েছিলেন। সন্তোষ শঙ্করণ পরিচয়ে ওই স্টিং অপারেশন করেছিলেন সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল। ‘মুকুলদা’ই তাঁর কাছে ম্যাথুকে পাঠিয়েছিলেন বলে মুখোমুখি জেরার সময় জানিয়েছেন মির্জা। ম্যাথুর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর তা তিনি মুকুল রায়কে এলগিন রোডের ফ্ল্যাটে গিয়ে দিয়ে এসেছিলেন বলেও দাবি করেছেন ওই পুলিশ কর্তা। যদিও মির্জার এই দাবি জেরার সময় মুকুল রায় অস্বীকার করেন বলে সিবিআই সূত্রে খবর। মুকুল সিবিআইকে জানান, কেউ অভিযোগ করতেই পারেন। তার প্রমাণ কোথায়? কারও নাম নিলেই কী দোষ প্রমাণিত হয়ে গেল? গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মির্জাকে নিয়ে এলগিন রোডে মুকুলের ফ্ল্যাটে ঘটনার পুনর্গঠনও করা হয়।
মুকুল রায়ও বলেন “আমিও চাই সত্যটা সামনে আসুক। কোনও রকম অনৈতিক কাজে আমি জড়িত নই। ভিডিয়োতে আমাকে কেউ টাকা নিতে দেখেনি। কেউ কোনও অভিযোগ জানাতেই পারেন, কিন্তু তা বলে কি বিষয়টি প্রমাণ হয়ে গেল? আগে প্রমাণ হোক। সিবিআই তদন্তের স্বার্থে যত বার ডাকবে যাব।”
click and follow Indiaherald WhatsApp channel