শিরোনাম পড়ে চমকে গিয়েছেন নিশ্চয়৷ ফেসবুকে সিদ্ধব্রত দাস এমনই লিখেছেন৷ জাতীয় বাংলা সম্মেলনের অন্যতম এই কান্ডারি বিজেপি নিয়ে আরও অনেক কিছু লিখেছেন৷ তাঁর লেখাটি নিচে তুলে ধরা হল হুবহু৷
কেউ বাঙালি হিসেবে বিজেপি করে না। বিজেপিকে আপন করার আগে তার অন্তরের বাঙালিত্বকে সে মেরে দেয়। তাই সাধারণত তাদের মধ্যে বাংলা ভাষার প্রতি ঘৃণা, বাংলার সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা, ইতিহাসের প্রতি ঘৃণা, বাংলাকে কাংলা বলা, বাংলাদেশের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ এবং গুজরাঠি, মারওয়ারী, ইউপি সহ উত্তর ভারতের লোক ও সংস্কৃতির প্রতি প্রেম, “তাদের দেখে বাঙালির শেখা উচিত” ইত্যাদি ভাব ধারণা প্রকট ভাবে লক্ষ্য করা যায়। অদ্ভুত ভাবে তাদের মধ্যে কিন্তু দক্ষিণ ভারতকে দেখে শেখা উচিত এমন মানসিকতা দেখা যায় না। যখন দক্ষিণ ভারতের প্রতিটা রাজ্য উত্তর ভারতের থেকে অনেকগুন উন্নত।
আরও পড়ুন: ‘তবু ঠাঁই নেই কারও অন্দরে’
এই শ্রেণীটির আবির্ভাবের অন্যতম কারণ দিল্লি মিডিয়া, বলিউড ও ভারতীয় ক্রিকেট। এই তিন ক্ষেত্রই উত্তর ভারতীয় আধিপত্যবাদকে সুকৌশলে প্রমোট করে এসেছে বিগত ৭০ বছর ধরে এবং এটা মনে গিথে দিয়েছে যে ওরা হলো প্রভু আর বাদবাকি ভৃত্য। তাই তারা প্রভুর মতো হওয়ার চেষ্টা করে।
জাতিগত ভাবে বাঙালির মধ্যে এক তীব্র হীনম্মন্যতায় ভোগা শ্রেণীকে জন্ম দিয়েছে এই ব্যবস্থা। যা সাধারণত যেকোনো সাম্রাজ্যবাদ করে থাকে।
আরও পড়ুন: শিকারা, এক বেদনা বিধুর সিনে-কাব্য
এটা সম্ভব হলো কি করে ?
স্বাধীনতার পর ভারতের দুটো বড় প্রদেশ বাংলা আর পাঞ্জাব ভাগ হয়ে যাওয়ার পর যেই খণ্ড সবচেয়ে বড় রয়ে যায় তা হলো হিন্দি বলয় বা গোবলয়। যদি এই ভাঙ্গন না হতো ভারতের ক্ষমতার রাশ বাংলার হাতে থাকতো। বাংলা থেকে ১২০টির মতো এমপি হতো সংসদে। উত্তর ভারতের হাতে রাশ যাওয়ার পর জন্ম নিল হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী। এবং গুজরাঠি, মারওয়ারী বেনিয়া ক্লাস তার অংশ না হলেও যেহেতু তারা বেনিয়া শ্রেণী তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে তাদের আধিপত্য মেনে নিল এবং তার থেকে তৈরি হলো এক ধরণের নেক্সাস। হিন্দি সাম্রাজ্যবাদকে তারা প্রভু রূপে মেনে নেবে এবং তার পুরস্কার স্বরূপ ভারতবর্ষের পুঁজি বাজার হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ তাদের উপহার দেবে। যদিও এই সমঝোতা স্বাধীনতার আগে থেকেই ছিল কিন্তু স্বাধীনতার পর এটি প্রকট হয়ে ওঠে। দেশভাগও এই সমঝোতার অংশ। এই নেক্সাস কোনোদিন এই নেক্সাসের বাইরে কোনো পুঁজিপতিকে ভারতে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়নি। 
আরও পড়ুন: মোদীকে তাড়াতে বিদেশি বিনিয়োগ! বলে কি
একটা জিনিস খুব লক্ষ্যণীয় বিষয়ে স্বাধীনতার পর কংগ্রেস যে সকল রাজ্যে দুর্বল ছিল ( মুলত দক্ষিণ ভারত) সেইখানে এই বেনিয়া ক্লাস কিন্তু বেশি জায়গা করতে পারেনি। সেই প্রদেশের জাতীয় বুর্জোয়া ক্লাস গড়ে উঠেছে। কিন্তু যেই সকল প্রদেশে কংগ্রেস রাজত্ব করেছে সেখানেই তারা ঢুকেছে এবং সেই প্রদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করার সাথে সাথেই রাজনীতির নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে উঠে আসে। প্রতিটা পার্টিকেই তাদের তোল্লাই দিয়ে চলতে হয়ে। ভারতে রিজিওনাল শক্তির উঠে আসা এক প্রকার রিজিওনাল এসপিরেশন এই নেক্সাসের বিরুদ্ধে। এবং এই নেক্সাস যেই দেখলো যে রিজিওনাল পার্টিদের হাতে যদি ভারতের চালিকা শক্তি চলে যায় তাদের এই নেক্সাসের ভবিষ্যৎ অন্ধকার তখনই এই নেক্সাস নব রূপে ফিরে এলো বিজেপি হয়ে। বিজেপি আর কিছুই নয় “নব কংগ্রেস”।
আরও পড়ুন: ‘কিবু বুদ্ধিমান, অ্যালেহান্দ্রোকে আমি বোকাই বলবো’
এটা পাল্টানোর উপায় কি ? 
এটা পাল্টাতে গেলে যেটা সবচেয়ে প্রয়োজন সেটা হলো গুজরাঠি-মারওয়ারী বেনিয়া ক্লাসের কাউন্টার হিসেবে বাংলার জাতীয় বুর্জোয়া ক্লাস তৈরি করা। এটা হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দুর্গের মতো কাজ করবে। সেটা না করতে পারলে আমরা যতই দাপাদাপি করি বিজেপি-আরএসএসকে কোনোদিন আটকানো সম্ভব না। দু-একটা ভোট হারলেও এরা আবার ফিরে আসবে। এবং তার সঙ্গে আসবে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের সকল নোংরা খেলা। রক্তবীজের মতো এদেরও মরণ নাই।

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: