ভাবছেন ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য থেকে বেহুলা চলে এসেছেন বেহালায়? খুব একটা ভুল ভাবছেন না। এসেছেন বেহুলা, কিন্তু অন্য কায়দায়। শোনা যায় ‘বেহালা’ নামটি এসেছে ‘বেহুলা’ থেকে।

ছবিঃ প্রকাশ পাইন
আর যাঁরা বেহালায় থাকেন তাঁরা অনেকেই জানেন না বেহালার ইতিহাস। বেহালায় একসময় ট্রেন চলত, সেই কথাও জানেন না অনেকে। বেহালা সুন্দরবনের অংশ নাকি এই বেহালা। এরকম আরও বহু ইতিহাস জড়িয়ে আছে বেহালার সঙ্গে।

ছবিঃ প্রকাশ পাইন
আরও পড়ুনঃ শীতের আমেজে ‘শ্রাবণের ধারা’
জনাকয়েক শিল্পীমনের মানুষের উদ্যোগে বেহালা নূতন সংঘে সেজে উঠেছে শিল্পের নানা রং। ছোট্ট একটি গলিকে কী ভাবে শিল্পকর্ম দিয়ে আর্ট গ্যালারির রূপ দেওয়া যায় তা ‘বেহালা আর্ট ফেস্ট’-এ করে দেখিয়েছেন শিল্পীরা।

ছবিঃ প্রকাশ পাইন
আমরা অনেকেই সবসময় আর্ট গ্যালারিতে গিয়ে বা মিউজিয়ামে গিয়ে শিল্পের স্বাদ নিতে পারি না। অথচ খিদে আমাদের আছে। তাঁদের জন্য ‘বেহুলা’ থাকবে এবার থেকে। এ বছরই প্রথম এই উদ্যোগ নিয়ে হাজির বেহালা নূতন সংঘ।

ছবিঃ প্রকাশ পাইন
পাঁচিলে আঁকা রয়েছে নানান ভাবনার ছবি। একটি ফ্ল্যাট বাড়ির বাইরের দেওয়ালে আঁকা রয়েছে সাপ-লুডোর ছক। কোথাও আবার ডাইনোসরের স্কেলিটন। এক্সিবিশনে ঢোকার মুখেই আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে সাঁপুরের বাঁশি।

ছবিঃ প্রকাশ পাইন
‘বেহুলা’-তে হাজির হয়ে মনে হচ্ছিল- এ কোথায় এলাম! এ কি সেই জানজটের বেহালা? যেখানে এই মোড় থেকে পরের মোড়ে যেতে সময় লাগে কমপক্ষে কুড়ি মিনিট? ‘বেহুলা’-তে হাজির হয়ে একই ঘটনা ঘটল। পা এগোচ্ছিল না। তবে বিরক্তিতে নয়। ভালোলাগায়। আর সেই ভালোলাগার সঙ্গে মিশে ছিল শিল্পরস।
শিল্পরসিকরাই মজা পাবেন এখানে গিয়ে। ভাববেন, প্রবেশ করবেন মনসা মঙ্গলের পাতায়। ‘বেহুলা’ চত্বরে বসে বেহুলার জীবনের নানা কাহিনি গানের মাধ্যমে তুলে ধরছেন শিল্পীরা।
‘বেহালা আর্ট ফেস্ট’-এর আহ্বায়ক শিল্পী সনাতন দিন্দা জানান, “ধর্মকে বাদ দিয়েও শিল্প তৈরি হয় তা জানান দিল ‘বেহুলা’৷

অনেক শিল্পীর শিল্পকীর্তি রয়েছে এখানে। বেহালা নূতন সংঘে আয়োজিত ‘বেহুলা’ কোনও মেলা নয়, কোনও পুজো বা উৎসবকে কেন্দ্রে রেখে আয়োজন করা হয়নি। ‘বেহুলা’ তার নিজের কারণে নিজে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
শিল্প কেবল কোনও আর্ট গ্যালারির ক্যানভাস কিংবা স্কাল্পচারে আটকে থাকে না তা প্রমাণ করে দিল ‘বেহুলা’। এখানে কোনও ফ্রেম নেই, এখানে কোনও ছবি বিক্রি হবে না, কোনও মিউজিয়াম এখান থেকে ছবি নিয়ে গিয়ে স্টোর করবে না। এখানে মানুষ শুধু শিল্পের স্বাদ নিতে আসবে। নিজেদের শিল্পখিদে মেটাতে আসবেন এবং আসছেন।
লখিন্দর জায়া বেহুলা এক লড়াইয়ের নাম। তাঁর জীবনকাহিনি বড় করুণ। বিয়ের রাতেই তাঁর স্বামী মারা যান।বেহুলাকে অনেক কটূ কথা শুনতে হয়। তিনি ভেলায় চড়ে পাড়ি দেন স্বর্গলোকে। আমরা প্রায় সকলেই জানি সেই ইতিহাস।
নূতন সংঘের উদ্যোগে ‘বেহালা আর্ট ফেস্ট’-এ ‘বেহুলা’ একটি কনসেপ্ট। এর পরে আরও অন্য কোনও কনসেপ্ট নিয়েও এগিয়ে আসবে ‘নূতন সংঘ’। শামিল হব আমরাও।”

শিল্পী উপাসনা চট্টোপাধ্যায় জানান, “আমরা বেহালাবাসীরা অনেকেই জানি না বেহালার ইতিহাস। ‘বেহুলা’ জানান দেবে সেই ইতিহাস। ‘বেহালা’ এসেছে ‘বেহুলা’ থেকে। আর বেহুলা এসেছে ‘বহুলা’ থেকে। ‘বেহালা আর্ট ফেস্ট’-এর প্রথম নিবেদনে তাই ‘বেহুলা’। ইতিহাসকে খুঁচিয়ে তোলার কাজ রয়েছে এখানে। ক্যানভাস, স্কাল্পচারের বাঁধন ছিঁড়ে শিল্প হাজির বেহালার এক ছোট্ট গলিতে। কোনও ঘরের ভিতরে নয়, একেবারে রাস্তায়। গলি হয়ে উঠেছে শিল্পের আঙিনা! এমনটাও সম্ভব তা জানাল ‘বেহালা নূতন সংঘ’।

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: