এই প্রথম বড় পর্দায় প্রফেসর শঙ্কুকে নিয়ে আসতে চলেছেন সন্দীপ রায়। বর্তমান যুগে গল্পটিকে দেখাতে গিয়ে সামান্য হেরফের করা নিয়ে তাঁর মত ‘বাবা যে সময়ে লিখে গিয়েছেন, সে সময়টা তুলে ধরা খুব মুশকিল। গিরিডিও খুবই জনবহুল হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে বিদেশের এত পরিবর্তন হয়েছে যে, ওই ষাট-সত্তরের দশক পর্দায় দেখানোটা খুবই কঠিন। সেই কারণেই গল্পটাকে আধুনিক সময়ে নিয়ে আসা... তবে তার জন্য গল্পে খুব একটা পরিবর্তন আনতে হয়নি। গল্পটা যে কোনও পিরিয়ডে ফেলা যায়। কারণ শঙ্কুর তো সাংঘাতিক ইনভেনশন! ভাগ্যক্রমে সেগুলো এখনও হয়নি’!

গল্পে শঙ্কু মোবাইলও ব্যবহার করেছে। ‘তবে সেটা শঙ্কুরই ইনভেনশন, যেটা সাধারণ মোবাইল নয়। আসলে গল্পে যে ব্যাপারগুলো ছিল, সেগুলোকেই একটু এক্সপ্যান্ড করা হয়েছে’।

এই চরিত্রের জন্য তাঁকে কম কাঠ খড় পোড়াতে হয়নি। ‘প্রথম ক্রাইটেরিয়া ছিল, তাঁকে বাঙালি হতেই হবে। সঙ্গে ভাষার উপরে দখল থাকতে হবে এবং যিনি ইংরেজিটাও অনায়াসে বলতে পারবেন। এতে আমাদের খোঁজের পরিসরটা খুব ছোট হয়ে গিয়েছিল। সে দিক থেকে বয়স ও ফিজ়িকের বিচারে ধৃতিদা (ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়) খুবই অ্যাপ্রোপ্রিয়েট। নকুড়কে খুব তাড়াতাড়ি বাছা হয়েছিল। কারণ স্কেচটা দেখে প্রথমেই আমার শুভাশিসের (মুখোপাধ্যায়) কথা মনে হয়েছিল। আর এই চরিত্রটা আমার খুবই প্রিয়, যে কারণে ‘নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো’ গল্পটা বাছা। তবে চিন্তা ছিল অন্য একটা ব্যাপারে। শঙ্কু তো মিনিট দশ-পনেরো গিরিডিতে থাকছে। তার পরেই বিদেশে পাড়ি এবং সেখান থেকে ছবিটা ইংরেজিতে। তবে নকুড় থাকায় বাংলা ভাষার স্পর্শ ছবি জুড়ে থেকেই যাচ্ছে। আর আমরা ছবির দুটো ভার্সন রিলিজ় করব, যেখানে শঙ্কু বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলবে ইংরেজিতে এবং অন্যটি পুরোপুরি বাংলায় ডাব করে’।

তাঁর মতে ‘বেঞ্চমার্ক থাকার সুবিধে-অসুবিধে দুটোই আছে। আশা করি, সেই অসুবিধেটা পার করতে পেরেছি। আমার জন্য এটা এত নতুন রকমের ছবি যে, এটা বানাতে যেমন আনন্দ পেয়েছি, তেমনই রিলিজ়ের আগে ভয়ও করছে’।

বাজেট নিয়ে তাঁর বক্তব্য ‘ছবিটা যেহেতু বাইলিঙ্গুয়াল, তাই বাজারটা অনেক বড়। বিদেশেও ছবিটা রিলিজ় করা যাবে। সেটা নিয়ে প্রযোজকরা চিন্তাভাবনা করলে অনেক ওয়াইডার রিলিজ় হতে পারে। আসলে শঙ্কু নিয়ে ছবি করার সমস্যা একটাই, গল্পগুলো ছোট। দর্শকের ভাল লাগলে, পরে সিরিজ় করা যেতে পারে। ডাবল ফেলুদার মতো ডাবল শঙ্কু। তবে ছবি মুক্তি পাওয়ার পর সে সব ভাবব’।

আরও বললেন ‘এখন মানুষের অ্যাটেনশন স্প্যান খুব কমে গিয়েছে। ছবি দেখতে গিয়ে দেখি, অনেকেই হাতে মোবাইল নিয়ে খুটখুট করে চলেছে। তারা যে কী করে, ভগবানই জানেন! এখনকার স্পেশ্যাল এফেক্টসের ছবিগুলো যতক্ষণ দেখছি, ততক্ষণ চোখ ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা মনকে নাড়া দেয় না। আসলে বিদেশে ব্যাপারগুলো খুব সহজ। যা চাইছে, তা-ই পেয়ে যাচ্ছে! ভাগ্যিস সেটা এখানে হয়নি। শঙ্কুতে টপ প্রায়রিটি ছিল, গল্পের গুরুত্ব যেন কোথাও নষ্ট না হয়। গল্পের মধ্যে যতটকু স্পেশ্যাল এফেক্ট দরকার, ততটুকু থাকবে। এই গল্পটা বাছার কারণও এটা যে, এর টেকনোলজি আমরা এখানেই হ্যান্ডল করতে পাব। গোড়াতেই ঠিক করে নিয়েছিলাম, পুরো কাজটা কলকাতায় করব। আমরাও পারি— এই জেদ ভীষণ ভাবে চেপে গিয়েছিল। তবে এখনও ছবিতে গয়নাগাঁটি পরানো চলছে’।

ছেলেও আগ্রহী, ‘ওর একটা আগ্রহ জাগছে। আমিও ওকে খুব বেশি করে কাজের মধ্যে জড়িয়ে নিচ্ছি। ওর মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে বুঝতে পারি। তাই ও যখন কিছু বলে, সেটা আমি শুনি। বিশেষ করে এই ছবিটায় সব দিক থেকে সৌরদীপ ভীষণ সাহায্য করেছে। এখানে টেকনোলজিক্যাল এমন কিছু ব্যাপার রয়েছে, যা আমাদের মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ও থাকায় আমার খুব সুবিধে হয়েছে। ছবির সাবটাইটেলও সৌরদীপ করেছে’।

ফেলুদা আর শঙ্কুর স্বত্ব বিক্রি নিয়ে তাঁর মত ‘তখন ব্যাপারটা এত জটিল ছিল না। বাংলাদেশের টিভি এখানে আসে না। তবে হ্যাঁ, চোরাগোপ্তা ভাবে এখন সবই আসছে। ওয়েবের জন্য আমি প্রচুর গল্প দিয়েছি। তাতে গল্পগুলো আরও ছড়িয়ে যাবে। আর আমার একার পক্ষে সব কিছু করা সম্ভবও নয়। যাঁরা করতে চেয়েছেন, তাঁরা জানেন সত্যজিৎ রায় কে। অন্যদের কাজে নাক গলানো আমার অভ্যেসে নেই। ফেলু যাতে প্রেমে না পড়ে আর বিয়ে না করে... শুধু এইটুকুই খেয়াল রাখা’। 

‘টিভি বা ওয়েবের ক্ষেত্রে আমার খুব একটা আপত্তি নেই। কিন্তু বড় পর্দার রাইটস ছাড়ব না। আমাকে পরিবারের কথাও ভাবতে হবে। ছেলে যদি ভবিষ্যতে ছবি করে, ওর জন্য কিছু রাখতে হবে। তাই কিছু গল্প আমি ছাড়ব না, সেটা ফেলুদাই হোক বা শঙ্কু। তবে এক্ষুনি শঙ্কু ছাড়ার কোনও ইচ্ছে আমার নেই। কারণ বাজেটের একটা সমস্যা আছে। বাবা যে সব জায়গায় গিয়েছিলেন, সেখানে ফেলুকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু যে সব জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও যেতে পারেননি, সেখানে শঙ্কুকে পাঠিয়েছেন। এত খরচ করে তৈির ছবি টিভির জন্য নয় বলেই মনে করি’।

 

 

 

 

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: