অর্থনীতির ঝিমুনির খবর এখন আর কারও অজানা নয়। আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে নেমেছে। এ দিকে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ ছাপিয়েছে। মাথাচাড়া দিয়েছে বেকারত্বের হারও। তিনের মিশেলে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ নামক বিপদের আশঙ্কা। 

এই ‘উলটপুরাণ’ সামলাতে বিশল্যকরণীর দেখা মেলার আশা কেউই করছে না। কারণ রাজকোষে টাকাই নেই। ফলে অর্থমন্ত্রী যে বাজেটে দামি ওষুধের প্রেসক্রিপশন লিখবেন, সে সুযোগ কম। তাই দাবি একটাই। লুকোছাপা না-করে অর্থনীতির আসল পরিস্থিতিটা জানিয়ে দেওয়া হোক।

শিল্পমহল থেকে অর্থনীতিবিদ, বিদেশি লগ্নিকারী, সবার যুক্তি, মিথ্যে বাগাড়ম্বরে রাজনীতির জনসভা গরম হয়। অর্থনীতির চিঁড়ে ভেজে না। অর্থনীতির আসল ছবি কী, না জানলে কোনও শিল্পপতিই লগ্নি করতে এগোন না। শিল্পমহলের অগাধ আস্থা জিতেই নরেন্দ্র মোদী প্রথম বার ক্ষমতায় এসেছিলেন। দু’-তিন বছর আগে আর্থিক বৃদ্ধির হারে ভারত বিশ্বসেরা বলে সরকার ঢাক পেটাচ্ছিল। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পরে আর্থিক ভবিষ্যতের সঙ্গে সঙ্গে মোদীর উপরে শিল্পমহলের আস্থাও প্রশ্নের মুখে।

এর মূল কারণ, অর্থনীতির আসল অবস্থা স্বীকার না-করা, বাজেটে রাজকোষের ঘাটতি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ। জিডিপি মাপার নতুন পদ্ধতি নিয়ে সংশয়, বেকারত্বের হার ধামাচাপা দিয়ে রাখার অভিযোগ, গৃহস্থ সংসার খরচ কমিয়েছে বলে সরকারি রিপোর্ট আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দেওয়া তারই উদাহরণ। এ সব সত্ত্বেও ৩০০-র বেশি আসনে জিতে এসে কে আর অর্থনীতির ঝিমুনির কথা স্বীকার করতে চায়! সীতারামনও জুলাইয়ে তাঁর প্রথম বাজেটে করেননি। আয়কর থেকে জিএসটি— বিপুল আয় বাড়বে বলে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন। 

অভিযোগ, রাজকোষের ঘাটতির আসল অঙ্কও জানাননি নির্মলা। পরে দেখা গিয়েছে, সরকার বাজার থেকে কতটা ধার করবে, তার সব হিসেব বাজেটে নেই। তিনি জিডিপি-র পুরনো হিসেব ধরে অঙ্ক কষেছেন। যাতে জিডিপি-র ৩.৩% রাজকোষ ঘাটতি দেখানো যায়। কিন্তু প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ ফাঁস করে দিয়েছেন, আসলে ঘাটতি ৫% ছুঁইছুঁই। 

“ছয় বছরেও কেন অচ্ছে দিন এল না?” প্রশ্ন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের। অচ্ছে দিন দূর অস্ত, বাজারে বিক্রিবাটাই অস্তগামী। গত বাজেটে নির্মলা তা স্বীকার করেননি। পরে ঝিমুনি কাটাতে বাজেটের অনেক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন। ‘মিনি-বাজেট’ করে কর্পোরেট কর কমিয়েছেন। কিন্তু শেয়ার বাজার চাঙ্গা হলেও বাজারে বিক্রিবাটা বাড়েনি। গত দু’দশকে প্রথম আয়কর-কর্পোরেট কর আদায় কমছে। রাজস্ব আয় লক্ষ্যের তুলনায় প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকা কম হবে বলে আশঙ্কা। আতঙ্কে এখন একশো দিনের কাজ, গ্রামে বাড়ি তৈরির প্রকল্পে খরচে হাত পড়েছে। বাজারে চাহিদা বাড়াতে গ্রামের মানুষের হাতে কিছু বাড়তি টাকা গুঁজে দেওয়া দরকার ছিল। হচ্ছে ঠিক উল্টো। 

মানুষের হাতে বাড়তি টাকা দিতে আয়করের হার কমবে বলে প্রত্যাশা তুঙ্গে। কিন্তু চিদম্বরমের মতে, “আয়কর কমালে ভুল হবে। বাজারে চাহিদাও বাড়বে না। লাভ হত জিএসটি কমালে। কিন্তু সরকার নিজেকে এমন গেরোয় ফেলেছে যে, তার পথ নেই। অর্থনীতির অবস্থা এতই খারাপ যে সরকার যা-ই করুক, ফল উল্টো হবে।’’ 

 

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: