একবারেই ভিন্ন মতাদর্শের দু’টি মানুষ। কিন্তু সারাজীবন থেকেছেন এক ছাদের তলায়। ভালবেসেছেন দু’জন দু’জনকে। আজ প্রিয় বান্ধবীকে হারিয়ে বড্ড একা হয়ে পড়লেন স্বরাজ কৌশল।

 

পথ চলা শুরু সেই কলেজ জীবন থেকে। এক জন কট্টর রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের মতাদর্শে বিশ্বাসী, আর এক জন সমাজবাদী। জরুরী অবস্থার কয়েক বছর আগে জর্জ ফার্নান্ডেজের রেল আন্দোলন ঝড় তুলেছিল সারা দেশে। ১৯৭৫-এ জরুরী অবস্থার গ্রেফতার করা হল সমাজবাদী এই নেতাকে। জরুরী অবস্থার বিরুদ্ধে তখন প্রতিবাদে এক হয়ে লড়ছে জনসঙ্ঘ ও আরএসএস। সুপ্রিম কোর্টে জর্জের হয়ে যে আইনজীবী দল লড়ছিলেন সেই দলে ছিলেন সুষমা ও স্বরাজ। কিন্তু লক্ষ্য এক হওয়ায় একসঙ্গে লড়তে অসুবিধা হয়নি কখনও। তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত দু’জনের। কিন্তু হরিয়াণার অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবারে বড়ে হয়ে ওঠা সুষমার পরিবার, আত্মীয়স্বজনরা কেউ মেনে নিতে চাননি তাঁদের বিয়ে। একরকম নিজের বাড়ির বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেই স্বরাজকে বিয়ে করলেন সুষমা। দিনটা ১৯৭৫ সালের ১৩ জুলাই- এক হলো চার হাত। তারপর নামের পাশে সুষমা বসালেন ‘স্বরাজ’। সেই থেকে তিনি সুষমা স্বরাজ।

 

এভাবেই সময়ের সঙ্গে এগিয়েছে সুষমা আর স্বরাজের জীবন। কিন্তু কোনও দিনই কেউ কাউকে প্রভাবিত করেননি। তাই কোনওদিন স্বরাজও বিজেপিতে যোগ দেননি। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন, ১৯৯০ সালে তখন স্বরাজ কৌশলকে পাঠানো হল মিজোরামের রাজ্যপাল করে। সেখানে রাজ্যপাল ছিলেন ১৯৯৩ পর্যন্ত। পরেও হরিয়ানা বিকাশ পার্টির সাংসদ হয়েছিলেন সুষমার স্বামী। তবে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে শারীরিক অসুস্থার জন্য মাঠের লড়াই থেকে নিজে থেকে সরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুষমা স্বরাজ। তবে দলের যে কোনও বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন বরাবর। তাই তো সুষমা স্বরাজের শেষ ট্যুইটও সেরকম। ৩৭০ প্রসঙ্গে ট্যুইট করেছিলেন, এই দিনটা দেখার জন্যে অপেক্ষা করেছি আজীবন। ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে।

 

কিন্তু যখন তিনি নরেন্দ্র মোদীকে জানালেন এ বারের লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়াবেন না, তখন কৌশলের বোধহয় খুশিই হয়েছিলেন। ট্যুইটে অকপট স্বীকারোক্তি ছিল তাঁর। লিখেছিলেন, ‘‘আর কখনও নির্বাচনে না লড়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার মনে আছে, একটা সময় মিলখা সিংও দৌড়নো বন্ধ করেছিলেন। তোমার এই ম্যারাথন শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ৪১ বছর। ১১টি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছ। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে হলে ১৯৭৭ সালের পরে সবক’টি নির্বাচনেই তুমি দাঁড়িয়েছ। একমাত্র ১৯৯১ এবং ২০০৪ সালে দল তোমাকে নির্বাচনে দাঁড়ানোর টিকিট দেয়নি। ২৫ বছর বয়স থেকে ইলেকশনের লড়াই শুরু করেছিলে। ৪১ বছর কিন্তু বেশ লম্বা ম্যারাথন।’’

 

কিন্তু হঠাত করে জীবনের লড়াইটাই যে থামিয়ে দিলেন সুষমা স্বরাজ। তাই প্রিয় বান্ধবীকে হারনোর শোকটা আজ প্রতিটা পদক্ষেপে ফুটে উঠছিল স্বরাজ কৌশলের।



మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: