একটা বিখ্যাত আফ্রিকান প্রবাদবাক্যের কথা মনে পড়ে গেল। ” ডোন্ট থিঙ্ক দেয়ার ইস নো ক্রোকোডাইল, অ্যাজ দ্য ওয়াটার ইস কাম “। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন প্রশিক্ষক অ্যালেহান্দ্রো মেনেন্ডেজ গার্সিয়া কোনও কালে আফ্রিকা মহাদেশে কোচিং করাননি। 
আমার মনে হয় না, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রবাদ বাক্য নিয়ে তিনি কখনও পড়াশোনা করেছেন। আর দল গঠনের বিষয়ে দেখেছি, অ্যালেহান্দ্রো আফ্রিকান ফুটবলারদের ব্রাত্যই মনে করতেন। 
সেনেগালের ফুটবলার বলে, কাসিম আইদারাকে প্রথম দিকে খেলাতেন না। পরবর্তীতে যখন জানলেন, কাসিম সেনেগালিজ হলেও, জন্মসূত্রে জার্মান, তখন থেকে প্রথম দলে খেলছে। এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য!
আরও পড়ুন: অর্জুনের ব্রহ্মাস্ত্রই কি ভবিষ্যতের পরমাণু বোমা!
মোহনবাগান প্রশিক্ষক কিবু ভিকুনা জন্মসূত্রে স্প্যানিশ হলেও পোল্যান্ডের ক্লাবদলে কোচিং করাতেন। পোল্যান্ড ইউরোপীয় দেশ হলেও, বহু আফ্রিকার মানুষের বসবাস। তাই আফ্রিকা মহাদেশ নিয়ে ছুৎমার্গ নেই কিবুর। 
নদী শান্ত মানেই যে সেই জলে কোনও কুমির নেই– এমন ভাবনা তাই কখনওই মনে ধরে রাখেননি মোহন প্রশিক্ষক। বরঞ্চ দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দ্বিতীয় জানালার সাহায্যে নিয়ে এসেছেন বাবাকর দিয়াওয়াড়াকে। 
বঙ্গ মিডিয়া কেনও যে এই ফুটবলারটিকে নিয়ে দুকলম লিখল না আমার জানা নেই। বাবাকর দিয়াওয়াড়ার জীবনপঞ্জি কিন্তু বেশ ঈর্ষণীয়। লা লিগার দল সেভিয়ার নিয়মিত ফুটবলার ছিল বাবা। খেলেছে রাকিতিচের সঙ্গে। 
এবং বেশ ভাল গোল চেনে। কুড়িটা ম্যাচ যদি মোহন জার্সিতে খেলে আই লিগে নামতো, আগুন জ্বালিয়ে দিত মাঠে। ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল গত বছর মেক্সিকোর জাতীয় দলের প্রাক্তনী এনরিকে এস্কোয়েদাকে। 
জনি অ্যাকোস্তার জাতের ফুটবলার ভারতবর্ষে দ্বিতীয় কেউ আসবে কি না, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাই ওর প্রসঙ্গে যাব না। মজিদ বিশকারের খেলা আমি দেখেছি। সত্যিই ফুটবলের রাজপুত্র, কিন্তু ইরানি ফুটবলার যদি রাজপুত্র হয়, রাজা অবশ্যই জনি অ্যাকোস্তা। ওর পর যে থাকবে, সে পুওর সেকেন্ড। অনেকটা লতা মঙ্গেশকরের পর কে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, বিষয়টি তেমনই।
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ শাসনের যাঁতাকলে পড়েই ভারতীয়ত্বের উৎপত্তি!
অ্যালেহান্দ্রোর জনি, কাসিমকে নিয়েও দোনামনা ছিল প্রথম দিকে। কারণ একটাই। ওই দুজনকেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করেছিল। মুম্বইয়ের এক ফুটবল এজেন্ট ওঁকে বোঝায়, জনির চেয়ে ভাল ফুটবলার কম টাকায় পাওয়া যাবে। 
তারপরেই ক্রেসপির আগমন। একজন ফুটবল প্রশিক্ষকের চোখে ধরা পড়লো না এই দুই ফুটবলারের মধ্যে তফাতটা ? বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়! আরও কষ্ট হয়, যখন তাঁর জীবনপঞ্জিতে জ্বলজ্বল করে লেখা থাকে রিয়েল মাদ্রিদ কাস্তিলার প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি! 
জানি না, অ্যালেহান্দ্রো কাকে খুশি করতে চাইছিলেন — ইস্টবেঙ্গলের কোটি কোটি সদস্য সমর্থকদের না কি কোয়েস কর্পের কর্ণধার অজিত আইজ্যাক, সিইও সঞ্জিত সেন, এবিসিডি ফ্যানক্লাব না কি অশিক্ষিত সাংবাদিক টুপিবাবুকে ? কাকে ? 
নদী শান্ত দেখে তিনি ভাবলেন এই জলে কুমির থাকতেই পারে না! কুমির যে তাঁর আশেপাশেই ঘুরে বেড়াতো–কখনও এবিসিডি ফ্যানক্লাবের সদস্য হিসেবে, কখনও বা অশিক্ষিত টুপি পরিহিত এক ফুটবল সাংবাদিক সেজে–তিনি ধরতেই পারলেন না !
কিবু অনেক লো প্রোফাইল প্রশিক্ষক হলেও বুদ্ধিমান। নিজের আশপাশে ঘেঁষতে দেননি ওই টুপিকে। রেস্তরাঁয় নিজের পাশের চেয়ারে বসার অনুমতিও দেননি ওই টুপিকে। না দিয়েছেন কোনও ফ্যানক্লাবের কর্তাব্যক্তিদের নিজের অন্দরমহলে প্রবেশাধিকার। প্রতিষ্ঠান কিবুর কাছে অনেক বড়। কোনও ব্যক্তি নয়। আর অ্যালেহান্দ্রো ভাবলেন, প্রতিষ্ঠান কী? 
ব্যক্তি অজিত আইজ্যাক, সঞ্জিত সেন, টুপি সাংবাদিক আর এবিসিডির কর্তারাই ইস্টবেঙ্গল ক্লাব! ভুলটা এখানেই। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফুটবলাররা নয়, সফল আফ্রিকা আর লাতিন আমেরিকার ফুটবলাররাই। 
লা লিগা ভারতে জনপ্রিয় হলেও, তা জনপ্রিয় লাতিন আমেরিকা আর আফ্রিকান ফুটবলার দৌলতেই, মেসি-রোনাল্ডো-দিঁদিয়ের জকোরা-বদৌ এজাকি-সালিফ কৈতার সৌজন্যে। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের ইতিহাস যদি কেউ টুপিবাবুর মুখ থেকে শোনে, তাহলে যা হওয়ার, তাই হয়েছে! এই আইলিগে এগারোটি দলের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্রী পারফরমেন্স ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের। আর সবচেয়ে খারাপ মানের বিদেশি ফুটবলার চয়ন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে! 
বিশ্বাস করুন, যে সব গোল মার্কোস, কোলাডোরা মিস করেছে, এখনও ইস্টবেঙ্গল জার্সি পরিয়ে আই এম বিজয়ন বা ৪২ বছর বয়স্ক ভাইচুং ভুটিয়াকে নামিয়ে দিলে, করে দেবে। কোলাডো এখন গতবছরের ছায়া মাত্র। ক্লাবের তত্ত্বাবধানে রাখলে যদি ওর জীবনযাত্রা শোধরায়!
অ্যালেহান্দ্রোকে আমার একটাই প্রশ্ন: এতোই যদি লাল হলুদ জার্সি আর মশালকে সম্মান করেন আপনি, তাহলে কেনও সুপার কাপে দল নামানোর জন্য চাপ দিলেন না কোয়েসকে ? কেনও কলকাতা লিগে ওয়াকওভার দিলেন একটা ছোটদলকে ? জবাব আছে আপনার কাছে ?
একবারও কি আপনার মনে হয়নি, আপনি কান দিয়ে দেখছেন, চোখ দিয়ে না দেখে ? একটা প্রশ্নেরও আপনার কাছে জবাব নেই। আপনি সুশিক্ষিত ফুটবল প্রশিক্ষক হলেও, নোংরা মানুষের সঙ্গতে পড়ে গায়ে কাদা মেখে বসেছিলেন। 
কিবু ভিকুনা পোল্যান্ডের দ্বিতীয় ডিভিশন দলের প্রাক্তন প্রশিক্ষক হলেও আপনার চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান। যে ধরনের ঔদ্ধত্য আপনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখিয়েছেন, মোহনবাগান কিংবা চার্চিল ব্রাদার্সের মতো দল হলে, মরসুমের শুরুতেই আপনাকে পদত্যাগ করাতেন তাঁরা। 
ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কর্তৃপক্ষ অনেক অনেক স্নেহশীল, সংবেদনশীল, তাই আপনার ঔদ্ধত্য দেখার পরেও চুপ করে ছিল সবাই। কেউ আপনার কাজে হস্তক্ষেপ করেনি কখনও, কেউ মিডিয়ায় আপনার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেনি কখনও। আপনাকে ক্ষমার চোখে দেখেছেন সকলে।
অ্যালেহান্দ্রোকে আমার এখনও মনে হয় সহজ সরল একজন মানুষ, যিনি ভুল পথে চালিত হলেন গত দেড় বছরে, কিছু নোংরা লোকের পাল্লায় পড়ে। গ্রেমাইন্ড কমিউনিকেশনের প্রতিষ্ঠাতা অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আমার অনুরোধ, টুপির মতো অশিক্ষিত কাটমানিখোর একজন সাংবাদিককে পুষে নিজের প্রতিষ্ঠানকে আর কলঙ্কিত করবেন না। বিদেয় করুন এইসব জঞ্জালগুলোকে। কোয়েস চলে যাবে, কিন্তু গ্রেমাইন্ড কমিউনিকেশন থাকবে। থাকবে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের মতো ক্লাবগুলি।
ভাল থাকবেন সকলে।

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: