বুধবার মেয়ে পূর্ণিমা বিশ্বাসের মৃত্যুর দু’বছর পরে তাঁকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন গল্ফ ক্লাব রোডের ঝোড়োবস্তির বাসিন্দা মুন্না হালদার। সেই কান্নাই যেন আরও বাড়ল সদ্য মা হওয়া কলকাতা পুলিশের এক কনস্টেবলের মৃত্যুর খবর শুনে। কোনও মতে মুন্নাদেবী বললেন, ‘‘আমার মেয়েটা যখন ডেঙ্গিতে মারা গেল, তখন ও অন্তঃসত্ত্বা। ন’মাস হয়ে গিয়েছিল। রুনুর বাচ্চাটাকে তবু বাঁচানো গিয়েছে, আমরা তো সেটুকুও পারিনি।’’
এ দিনই বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে রুনু বিশ্বাস নামে ২৮ বছরের এক মহিলা কনস্টেবলের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা রুনু ২৬ অক্টোবর ভিআইপি রোডের একটি হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই প্রবল জ্বর নিয়ে ২৯ তারিখ তাঁকে বাইপাসের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই এ দিন মারা যান তিনি। এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই বছর দুয়েক আগে পূর্ণিমার ঘটনার মিল পাচ্ছেন। ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা পূর্ণিমাকেও জ্বর নিয়ে দু’টি হাসপাতালে ঘুরতে হয়েছিল। শেষে তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা লেখেন, ‘ডেঙ্গি ফিভার, সেপটিক শক উইথ মাল্টি-অর্গান ফেলিয়োর’। তবে ওই ঘটনার পরেও এলাকার ডেঙ্গি-চিত্র কিছুমাত্র বদলায়নি বলে অভিযোগ করছেন গল্ফ ক্লাব রোডে পূর্ণিমার প্রতিবেশীরা।
দেখা গেল, পুরনো সেই দশ ফুট বাই দশ ফুট ঘরে জামাই সোমনাথ বিশ্বাস ও ছেলে সোমনাথ হালদারকে নিয়ে থাকেন পূর্ণিমার মা মুন্নাদেবী। একটি খাট পাতার পরে সেই ঘরে অন্য আসবাব রাখার জায়গা নেই। তার মধ্যেই দেওয়াল জুড়ে মেয়ের একের পর এক ছবির কোলাজ সাজিয়ে রেখেছেন মুন্নাদেবী। সেগুলি দেখাতে ব্যস্ত শাশুড়িকে থামিয়ে সোমনাথ বললেন, “আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পরেও তো পাড়ার অবস্থা বদলায়নি। এখনও নানা জায়গায় জল জমে থাকে। সাফসুতরো কখন হয়, কেউ জানেন না।” মুন্নাদেবীদের পাশের ঘরের বাসিন্দা গীতা মণ্ডলের আবার দাবি, “এ বারও পুজোর আগে আমাদের পাড়ায় ডেঙ্গিতে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। পরপর লোক মারা গেলেও কেউ সতর্ক হন না। না আসেন পুরসভার লোক, না কাউন্সিলর।” গীতাদেবীই দেখালেন, পূর্ণিমাদের ঘরের ঠিক পিছনেই আবর্জনার স্তূপ। আশপাশের ঘরগুলিতে খোঁজ করে জানা গেল, প্রায় প্রতিটিতেই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত।
ওই এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরোর অধীন। বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত অবশ্য ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “আমাদের বরো-র কিছু কিছু এলাকায় গত বারের থেকে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট ৪০ জনের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। কিন্তু পুরসভা কাজ করছে না বা পুরকর্মীরা এলাকায় যাচ্ছেন না, এই অভিযোগ ঠিক নয়।” প্রায়ই ওই এলাকায় নিকাশির কাজ তিনি নিজে তদারকি করেন বলেও দাবি করেছেন বরো চেয়ারম্যান।
click and follow Indiaherald WhatsApp channel