কর্ণাটকে কংগ্রেস জেডিএস জোট সরকার ফেলে দেওয়ার পেছনে বিজেপি বিধায়ক কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত বলে আগেই অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস দল । এবার সেই অভিযোগে সিলমোহর দিল কর্ণাটকের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা । তিনি বিজেপি দলের এক গোপন বৈঠকে বলেছেন , কংগ্রেস ও জনতা দল সেকুলার জোটের বিদ্রোহী বিধায়কদের ভাঙিয়ে কর্ণাটকে বিজেপির ক্ষমতা দখলের পেছনে অমিত শাহ-র ভূমিকা ছিল ।
রাজ্যের বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেন ইয়েদুরাপ্পা। সেখানে তাঁর বক্তৃতার একটি অডিয়ো রেকর্ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। তাতে বিধায়ক ভাঙানো থেকে তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে রাখা, আগাগোড়া অমিত শাহই সব ব্যবস্থাপনা করেছিলেন বলে মন্তব্য করতে শোনা যায় তাঁকে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করলে অডিয়ো রেকর্ডিংয়ের সত্যতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো তো দূর, বরং হুব্বালিতে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতা করার সময় তিনি দলের স্বার্থেই এমন মন্তব্য করেন বলে জানিয়ে দেন ইয়েদুরাপ্পা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ওই অডিয়ো রেকর্ডিংয়ে দলের কর্মীদের ভাঙিয়ে আনা ১৭ জন বিধায়কের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ইয়েদুরাপ্পা। তিনি জানান, দলের পক্ষ থেকে হুইপ জারি হওয়া সত্ত্বেও আস্থাভোটে অংশ নেননি ওই বিদ্রোহী বিধায়করা। বরং মুম্বইয়ে পাঁচতারা হোটেলে বসেছিলেন তাঁরা। আগাগোড়া তাঁদের পরিকল্পনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
তিনি বলেন, ‘‘ইয়েদুরাপ্পা যে ওঁদের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেননি, এটা নিশ্চয়ই ভাল করে জানেন আপনারা! দলের সর্বভারতীয় সভাপতি সব কিছু জানতেন। তিনিই সব কিছুর তদারকি এবং সমস্ত ব্যবস্থাপনা করেন। ওই ১৭ জন বিধায়ক যে দু’-তিন মাস ধরে মুম্বইয়ের হোটেলে ছিলেন, নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে যেতে পারেননি, এমনকি পরিবারের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে পারেননি, এর পিছনে কী সিদ্ধান্ত কাজ করেছিল তা জানেন তো আপনারা?’’
ইয়েদুরাপ্পার কথায়, ‘‘তৎকালীন সরকারের কার্যকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওঁদের তো বিরোধী হয়ে বসে থাকার কথা ছিল। তা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য ভাবে আমাদের সাহায্য করেন ওঁরা। আমাদের শাসকের আসনে বসতে সাহায্য করেন। নিজেদের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যান। তাই পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ওঁদের পাশে থাকতে হবে আমাদের।’’
আসলে , কংগ্রেস ও জেডিএসের ১৭ জন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিলেও তাদের যোগ্য সম্মান দিচ্ছে না পুরোনো বিজেপি কর্মীরা । তার ফলে রাজ্য জুড়ে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে । কংগ্রেস ও জেডিএস থেকে আসা বিধায়কদের যথাযথ সম্মান দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আবেদন করেন । তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ প্রত্যাশিত। আমি অত্যন্ত ব্যথিত। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনও প্রয়োজনই ছিল না আমার। তিন-চার বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি আমি। আগেও এমন হতে দেখেছি আমি। আমার উপর বিশ্বাস রাখতে বলেছিলাম ওঁদের। এখন মনে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে অপরাধ করে ফেলেছি।’’
এ নিয়ে শুরু থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ তুলে এসেছে কংগ্রেস এবং জেডিএস। তাই ইয়েদুরাপ্পার মন্তব্য অস্বস্তি বেড়েছে বিজেপির। এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে তাদের তরফে কোনও মন্তব্য না করা হলেও, ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস। কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি দীনেশ গুন্ডু রাও টুইটারে লেখেন, ‘‘অনৈতিক ভাবে বিধায়ক ভাঙানোর অপারেশন পদ্মের কথা ফের মেনে নিলেন ইয়েদুরাপ্পা। পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে অমিত শাহই মু্ম্বইয়ে ওই বিদ্রোহীদের দেখভালের দায়িত্ব সামলেছেন। বিজেপি মাস্টারমাইন্ডের বিরুদ্ধে আর কী প্রমাণ চাই?’’


మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: