২০১৯-এর দূর্গা পুজোতে বর্ধমান শহরে তেমন কিছু অঘটন না ঘটলেও রীতিমত সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে বড়সড়ো অঘটন ঘটালেন ফুডিশ ক্লাব নামে বর্ধমানের একটি সামাজিক সংস্থা।দশমীর দিন সকালে কার্যত নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটিয়ে দিলেন তাঁরা বর্ধমান শহরে।রাজা রামমোহন সতীদাহ রদ করেছিলেন। বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ চালু করেছিলেন। আর এবার দেবী দুর্গাকে দশমীর দিন সিঁদুর দিয়ে বরণ করলেন রূপান্তরকামী (ট্রান্সজেণ্ডার) এবং বিধবা মহিলারা। আর এই ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই সোরগোল পড়ে গেছে গোটা শহর জুড়ে। 
মৈনাক বাবু জানিয়েছেন, এই বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বর্ধমান শহরের বেশ কয়েকটি বড় পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে গেছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আবেদন করেছেন আর পাঁচজন সাধারণ মহিলাদের মতই ট্রান্সজেণ্ডার এবং বিধবাদেরও সিঁদুর দিয়ে দেবীকে বরণ করার সুযোগ তৈরী করে দেওয়ার জন্য তাঁরাও এগিয়ে আসুক। মৈণাকবাবু জানিয়েছেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বর্ধমানের কোনো পুজো উদ্যোক্তাই তাঁদের এই আবেদনে সাড়া দেননি। শেষ পর্যন্ত ফুডিশ ক্লাবের এই অচলায়তন ভাঙার আবেদনে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন কাঁটাপুকুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। আর সেই মণ্ডপেই মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের লবঙ্গ লতিকা হোম থেকে প্রায় ১১জন রূপান্তরকামী (ট্রান্সজেণ্ডার) এবং বর্ধমা্ন শহরের বড়নীলপুরের বাসিন্দা বিধবা মীরা সিনহা এবং মমতা শিকদার সিঁদুর দিয়ে বরণ করলেন দেবী দুর্গাকে।
শুধু তাইই নয়, একদিকে ট্রান্সজেণ্ডাররা জীবনে প্রথমবার সিঁদুর দিয়ে বরণ করলেন দেবী দুর্গাকে। অন্যদিকে, তাঁদের সঙ্গেই হাতে সিঁদুর আর দুচোখে জলধারা নিয়ে মাকে বরণ করলেন মীরাদেবীরা। এতটাই তাঁরা বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন যে কেমন লাগছে তা বলার মত অবস্থায় ছিলেন না। সামাজিক বেড়াজালকে ভেঙে আদপেই জীবনে আর কখনও মাকে সিঁদুর দিয়ে যে বরণ করতে পারবেন, এই আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন মমতাদেবীরা। অন্যদিকে রূপান্তরকামীরা এমন অভিনব সুযোগ পেয়ে আপ্লুত। প্রতিনিয়ত যাঁরা সমাজের কাছ থেকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার, এমনকি এটাকেই তাঁরা মেনেও নিয়েছেন। তাই সামাজিক যে কোনো শুভ কাজে তাঁরা পারতপক্ষে পা বাড়ান না। একই কথা মীরাদেবীদেরও। শুভ কাজে তাঁদেরও যেতে নানান বাধা।
মঙ্গলবার সেই অচলায়তনই কার্যত তাসের ঘরের মত ভেঙে দিলেন ফুডিশ ক্লাবের সদস্যরা। খুশী মীরা দেবীরা। খুশি রোজি, মধুরাও। জানিয়েছেন, প্রতিবছরই তাঁরা মাকে বরণ করার অধিকার পেলেন এদিন – যা তাঁরা জন্মেও ভাবতে পারেননি। আর এই অচলায়তন ভাঙার যাঁরা অনুমতি দিলেন সেই কাঁটাপুকুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক বুদ্ধদেব সামন্ত জানিয়েছেন, যখন ফুডিশ ক্লাবের সদস্যরা তাঁদের কাছে এসে এই আবেদন রাখলেন তখন সত্যিই তাঁরা চমকে উঠেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে পুজো কমিটির সদস্যদের নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেই জানিয়ে দিয়েছিলেন এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে চান তাঁরা। তিনি জানিয়েছেন, এই অচলায়তন ভাঙার সাক্ষী থাকতে পেরে সত্যিই তাঁরা আনন্দিত।


మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: