খোদ মুসলিম হোষ্টেলে দুর্গাপুজোর জন্য ১৫ দিনের ছুটি ঘোষণা এবং সেই ঘোষণা করার পর ছাত্রদের হোষ্টেল সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাপ্য সুযোগ সুবিধার দাবীতে বুধবার সকাল থেকেই অনশন বিক্ষোভকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো বর্ধমান শহরে। বর্ধমান শহরের ছোটনীলপুর এলাকায় রয়েছে হজরত মানিক পীড় মুসলিম বয়েজ হোষ্টেল। হোষ্টেলের ছাত্র সংখ্যা ১১৪জন। ২০১৩ সালে এই হোষ্টেল চালু হয়। হোষ্টেলটির তত্ব্বাবধানে রয়েছে হজরত মানিক পীড় ইসলামিক সমাজ বিকাশ কেন্দ্র। রাজ্য সরকারের ওয়াকফ দপ্তরের অধীনে এবং অর্থানূকূল্যে এই হোষ্টেলটি নির্মিত হয়। 
জানা গেছে, মূলত যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছেন এবং স্কুল কলেজের ছাত্ররাও এই হোষ্টেলে থাকেন। চলতি বছরে এবং এই হোষ্টেলে প্রথম দুর্গাপূজোর জন্য ১৫ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয় মঙ্গলবার। একইসঙ্গে হোষ্টেল কর্তৃপক্ষ নির্দেশ জারী করে, বুধবার বিকাল ৪টের মধ্যে হোষ্টেল ছেড়ে চলে যেতে হবে ছাত্রদের। আর তারপর থেকেই শুরু হয় তীব্র ক্ষোভ। কর্তৃপক্ষের দাবী ওয়াকফ বোর্ডের নির্দেশানুসারেই এই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রদের অভিযোগ, ওয়াকফ বোর্ডের নিয়মানুযায়ী ছাত্র প্রতি ২০০- ২৫০ টাকা নেওয়ার কথা। সেখানে তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে মাসে প্রায় গড়ে ৭০০ টাকা করে। 
ছাত্রদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই এই হোষ্টেলের আর্থিক দুর্নীতির বিষয় নিয়ে তাঁরা সরব হয়েছেন। এমনকি রান্নাঘরের অবস্থাও অনেক খারাপ। পানীয় জল ও বাথরুমের অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। এছাড়াও গাড়ি ও সাইকেল স্ট্যাণ্ড নিয়েও তাঁদের অভিযোগ রয়েছে। এদিন হোষ্টেলে ছাত্র আরফত সেখ, সম্রাট সরকার, খাইরুল আলমরা জানিয়েছেন, তাঁরা ওয়াকফ বোর্ডের নির্দেশ অনুসারে দুর্গাপূজোর জন্য ছুটি নিতে রাজী আছেন। কিন্তু ওয়াকফ বোর্ডের নির্দেশ অনুসারে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা তাঁদের প্রাপ্য – যা তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দাবী করছেন – সেগুলিও একইসঙ্গে দেওয়া হোক। 
এদিন ছাত্ররা জানিয়েছেন, যতক্ষণ না তাঁদের দাবী পূরণ হচ্ছে ততদিন তাঁরা এভাবেই অনশন আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ছাত্ররা জানিয়েছেন, তাঁরা হোষ্টেলের ক্যাম্পাসের মধ্যেই অনশন বিক্ষোভে বসে থাকাকালীন কর্তৃপক্ষ হোষ্টেলে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে চলে যান। এদিন ছাত্ররা অভিযোগ করেছেন, হোষ্টেলের সেক্রেটারী সেখ মানোয়ার হোসেন তাঁদের হুমকি দিয়ে গেছেন হোষ্টেল না ছাড়লে তাঁদের গাঁজা কেস দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি রান্নাঘরেও তালা ঝুলিয়ে দিয়ে চলে গেছেন তাঁরা যাতে তাঁরা খাবার না পান। 
এদিকে, এই ঘটনার খবর পেয়েই বর্ধমান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তাঁরা ছাত্রদের সঙ্গে কথাও বলেন। অপরদিকে, হোষ্টেলের সম্পাদক সেখ মানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ছাত্রদের অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি জানিয়েছেন, এর আগে বিক্ষিপ্তভাবে আবাসিক ছাত্ররা ছুটি নিত। ফলে অনেক আবাসিক ছাত্রদের বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ উঠছিল। তাই এবার ওয়াকফ বোর্ডের পক্ষ থেকে নির্দিষ্টভাবে ২ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে। মানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই হোষ্টেল ছেড়ে গেলেও কয়েকজন থেকে গেছে। এব্যাপারে ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান সহ জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং বর্ধমান থানাকেও জানানো হয়েছে। ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশানুসারেই হোষ্টেলে তালা ঝোলানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মানোয়ার হোসেন।


మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: