হঠাৎ করেই একটা নাটকের অবসান হয়ে রাতারাতি আর একটা নাটকের সূচনা হয়ে গেলো। রাতারাতি মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ে ফেলল বিজেপি। ভোরের আলো ঠিক মতো ফোটার আগেই চুপচাপ প্রত্যাহার করা হল রাষ্ট্রপতি শাসন। তার সওয়া দু'ঘন্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন দেবেন্দ্র ফডনবীস। আরও বড় চমক দিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার।

কোন পথে, কোন সূত্রে এবং কখন এই নতুন সমীকরণ তৈরি হল, এখনও গভীর ধোঁয়াশা তা নিয়ে। কিন্তু যে কোনও মূল্যে মুখ্যমন্ত্রী পদ দখল করার হুঙ্কার ছাড়তে থাকা শিবসেনার হাত থেকে যে বেড়িয়ে গেল পুরো খেলাটাই, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের সংশয় কমই।

 

কখন মহারাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হল, কখন দেবেন্দ্র ফডণবীস সরকার গড়ার ডাক পেলেন, কখন শপথ গ্রহণ হয়ে গেল, জানলই না রাজনৈতিক শিবিরের বিরাট অংশ। কারণ যে সময় এই নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়াটা শুরু হল, তখন রাজনীতিদের অধিকাংশের ঘুমই ভাঙার কথা নয়। সব কিছু হয়ে যাওয়ার পরে নতুন সরকার গঠনের খবর সামনে এল। রাজনীতির দিকপালরা প্রথমে ভাবলেন ভুয়ো খবর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া দেবেন্দ্র ফডণবীস এবং নতুন উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ারকে অভিনন্দন জানাতেই সব সংশয় কেটে গেল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোররাতে নয়, এ ক্ষেত্রেও আসল 'খেলাটা' মধ্যরাতেই হয়ে গিয়েছিল, স্কোরবোর্ডটাকে ভোরবেলা সামনে আনা হল।

মহারাষ্ট্রে এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে জোট গড়ে লড়েছিল বিজেপি-শিবসেনা। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশিত হতেই শিবসেনা জানিয়ে দেয়, মুখ্যমন্ত্রী পদ আড়াই বছরের জন্য শিবসেনাকে দিতে হবে। বিজেপি তাতে রাজি হয়নি। তাই এনসিপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে সরকার গড়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে শিবসেনা। রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি প্রথমে বিজেপি-কে সরকার গড়তে ডাকেন। কারণ ১০৫ আসন পাওয়া বিজেপি-ই মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বৃহত্তম দল। কিন্তু জোটসঙ্গী শিবসেনার সমর্থন না পাওয়ায় নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা ছিল না বিজেপির। তাই রাজ্যপালকে ফডণবীস জানিয়ে দেন যে, তিনি সরকার গড়বেন না। এর পরে একে একে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা এবং শরদ পওয়ারের এনসিপি ডাক পায় সরকার গড়ার জন্য। কিন্তু শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস এক জায়গায় না এলে ম্যাজিক সংখ্যায় পৌঁছনো সম্ভব ছিল না। আর সেই এক জায়গায় আসার ফর্মুলা কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা ক্রমশ প্রলম্বিত হচ্ছিল। তাই সরকার গড়ার ডাক পেয়ে দু'দলই কয়েক দিন করে সময় চায়। রাজ্যপাল আর অতিরিক্ত সময় দিতে রাজি হননি। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় মহারাষ্ট্রে।

রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরেও অবশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা থেমে যায়নি। শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দফায় দফায় কথা এবং বৈঠক চলতে থাকে। কখনও শোনা যাচ্ছিল সেনা এবং এনসিপি আড়াই বছর করে ভাগ করে নেবে মুখ্যমন্ত্রী পদ। কখনও শোনা যাচ্ছিল পাঁচ বছরই মুখ্যমন্ত্রী পদ থাকবে সেনার হাতে। কখনও শোনা যাচ্ছিল কংগ্রেস সরকারে যোগ না দিয়ে বাইরে থেকে সমর্থন করবে এবং স্পিকার পদ নেবে। কখনও খবর আসছিল কংগ্রেসও সরকারে শামিল হবে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী পদ নেবে। কিন্তু আলোচনা কিছুতেই চূড়ান্ত হচ্ছিল না, তিন দলের তরফ থেকে যৌথ ভাবে সরকার গড়ার দাবিও রাজ্যপালের কাছে পেশ করা হচ্ছিল না।

এ দিন ভোর ৫টা ৪৭ নাগাদ রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হয় মহারাষ্ট্র থেকে। সকাল ৮টা ৫ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী পদে দেবেন্দ্র ফডণবীস শপথ নেন, সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অজিত পওয়ার। ৯টার একটু আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী টুইট করে ফডণবীস এবং পওয়ারকে অভিনন্দন জানান।

 

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: