কিছুদিন আগের একটা ঘটনা বলি। ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলিকে জরিমানা ভরতে হয় গুরগাঁওতে তার বাড়ির গাড়ি ধোওয়ার জন্য। আপনি বলবেন, সেকি! এ কেমন কথা!? নিজের গাড়ি ধোওয়ার জন্য জরিমানা?
হ্যাঁ, সত্যি কথা মশাই। কোহলির দোষ বলতে এতটুকুই ছিল যে তিনি গাড়িগুলো খাবার জল দিয়ে ধুইয়েছিলেন। এবং এই ধোলাই প্রক্রিয়ায় এতটাই জল তিনি ব্যয় করেছিলেন যে, তাতে দিল্লির একটা আস্ত জলসঙ্কট যুক্ত জনবহুল এলাকার মানুষদের একদিনের খাবার জলের চাহিদা পরিপূর্ণ হয়ে যেত। 
এবার আপনি বলবেন, জলের দুর্ভোগের উদাহরণ দিতে দিল্লির কথা আসছে কেন, রাজস্থানের নাম আসছে না কেনো?হে হে মশাই, কিছুই খবর রাখেন না দেখছি! কারণ রাজস্থান আর দিল্লির মধ্যে জলের দুর্ভোগের পরিমান আর এক বছর পর যদি পরিমাপ করেন, তাহলে সমান হয়ে যাবে। কী অবাক হচ্ছেন? হবেন না, হবেন না। আসুন তবে আপনাকে নিয়ে যাই আসল গল্পে...
National Institution for Transforming India (নীতি আয়োগ) এর একটি রিসেন্ট সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের ২১টি বড়ো বড়ো শহরের মাটির নিচ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে গায়েব হয়ে যাবে জলীয় স্তর। অর্থাৎ? অর্থাৎ ভারতের ২১টি বড়ো বড়ো শহর আর রাজস্থানের মধ্যে খুব বেশি তফাৎ থাকবেনা। জানতে চান এই লিস্টে সবার ওপরে দিকে নাম কাদের আছে? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ এবং অন্যান্য।
এবার আসুন একটু গভীরে যাওযা যাক এই বিপদের। জেনে নিই এই সার্ভে থেকে কি কি তথ্য উঠে এসেছে -
১. মাটির নিচের জলীয় স্তর নিঃশেষ হয়ে গ্যাছে প্রায়। যার ফল ভোগ করছে ২১টি শহর।
২. ভারতের ৬০ শতাংশ রাজ্যে জলের অপচয় চূড়ান্ত। যার ফলেই এই জল সংকট।
৩. প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে প্রচণ্ড জলকষ্টে ভুগছেন।
৪. ভারতে প্রতি বছর ২ লাখ মানুষ মারা যান, পানীয় জলের অভাবে।
৫. ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ৪০% জনসংখ্যা, পানীয় জলের অভাবে ভুগবে। অভাব ছাড়ুন তারা চাইলেও খাবার জল পাবেনা।
৬. মাটির নিচের জলের পরিমান, বিগত ১০ বছরে প্রায় ৬১% কমে গ্যাছে।
৭. ভারতের ৭৫% বাড়িতে খাবার জল পৌঁছায় না। 
৮. বর্তমানে জলের বিশুদ্ধতার পরিমাপের নীরিখে ভারত ১২০ নম্বরে, ১২২টি দেশের মধ্যে।
৯. ২০৫০ সালের মধ্যে জলসঙ্কটের কারণে বিশ্বসংসারে ভারতের GDP প্রায় ৬% কমে যাবে।
খুব তাড়াতাড়ি যদি এই সমস্যার সমাধান আমরা না করতে পারি, তবে বিপদের পরিমান অনুমান করতে পারছেন? ইতিমধ্যেই জলসঙ্কট যুক্ত জায়গায় চলছে জল মাফিয়াদের (হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন) রমরমা। লোকে খাবার জল কিনতে গিয়ে পেট ভরার টাকাও শেষ করে আসছে। এমন দিন হয়তো দেরি নেই যেদিন মানুষ সোনা বেচে, পানীয় জল কিনবে।
যেখানে সরকারের তরফ থেকে ফ্রিতে খাবার জল বিলি করা হচ্ছে সেখানে আশেপাশের ২০-৩০কিলোমিটার পরিধি থেকে মানুষ ছুটে আসছে, লাইন লাগাচ্ছে, মারপিট দাঙ্গা বাঁধছে। কে জানে, এই পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়তো পানীয় জলের জন্যই শুরু হয়ে যাবে একদিন।
মাটির নিচের জল শেষ হয়ে যাওয়ায়, চাষের জমিতে পর্যাপ্ত জল পৌঁছাচ্ছে না। ফলন কম হচ্ছে চাহিদার তুলনায়। ফলে সব্জির দাম হুহু করে বাড়ছে। আরো বাড়বে। কৃষকদের আত্মহত্যার গল্প আমরা আরো বেশি শুনবো খুব শীঘ্রই।
কুয়ো, টিউবওয়েল শুকিয়ে যাচ্ছে/যাবে খুব তাড়াতাড়ি। গ্রামের দিকের মানুষেরা তখন পুকুর আর পচা ডোবার জল খেতে বাধ্য হবে। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাবে এইভাবেই।
সমস্যা দিন দিন আরো গভীর হচ্ছে। কিন্তু কেউ কথা বলেছেনা এইসব ব্যাপারে। আমরা বেশিরভাগ মানুষ এই সমস্যার সম্পর্কে এখনো অবগতই হইনি। তবে আজ যারা জানতে পারছেন, তাদের প্রত্যেকের কর্তব্য এই মুহূর্ত থেকে, এই সমস্যার সমাধান খোঁজা। কিভাবে লড়বেন? বলছি -
১. গাছ লাগান। কেউ গাছ কাটলে তাকে কেটে ফেলুন। বৃষ্টির অভাব একটি অন্যতম কারণ মাটির নিচের জলীয় স্তর কমে যাওয়ার।
২. জলের অপচয় বন্ধ করুন। 'আজ এত গরম ছিল যে আমি বাড়ির ট্যাংক খালি করে দিয়েছি' বলে হাসার আগে, একবার ভাববেন, ওই এক ট্যাংক জলে একটা গোটা গ্রাম একদিন জলতেষ্টা মেটাতে পারতো।
৩. বাড়ির মা, কাকিমাদের জলের গুরুত্ব বোঝান। ওনারা অনেকেই বোঝেন না যে কোনোদিন পৃথিবীর বুকে থেকে জল শেষও হয়ে যেতে পারে। অধিকাংশ সময় আমি নিজের মা'কেই দেখি টাইম কল খুলে রেখে দিয়েছে। আমি বোঝাই, বোঝানোর পরেও না শুনলে খুব বকি। আপনিও তাই করুন।
৪. কাউকে ইললিগালি জলাশয় বুজিয়ে ফেলতে দেখলে, ওই জলাশয়ের পাশেই একটা গর্ত খুঁড়ে তাকে বুজিয়ে দিন।
৫. পলিউশন কন্ট্রোল করতে সাহায্য করুন। বায়ুদূষণ বন্ধ করুন।
৬. বাড়ির পাইপলাইনের লিকেজগুলো যত তাড়াতাড়ি পারেন সারিয়ে ফেলুন। 
৭. প্রত্যেকটা মানুষকে সচেতন করুন। জলের অপচয় দেখলে প্রতিবাদ করুন। নিজের জন্য না হলেও আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে এবার বদলান।
বিরাট কোহলি যে পানীয় জল রোজ পান করেন তার মূল্য ৬০০টাকা প্রতি লিটার। ২০৩০ সালে সেই পানীয় জলের মূল্য যদি ১০০০০টাকা প্রতি লিটারও হয়, উনি এফোর্ড করে নেবেন। কিন্তু আমরা? ২০টাকা দিয়ে এক লিটার জল খেতে গেলেও দু'বার ভাবি। ভাবুন তো ২০৩০ সালে ২০০০টাকা দিয়ে খেতে কেমন লাগবে?
আমরা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ড্রেস নিয়ে কথা বলি, আমরা রণবীর সিংয়ের ওয়াইল্ড লুক নিয়ে কথা বলি, আমরা মিমি নুসরাতের এপিয়ারেন্স নিয়ে কথা বলি, আমরা মদন দার সানগ্লাস নিয়ে কথা বলি, বং-গাইয়ের জোর করে কাতুকুতু দেওয়া ভিডিও দেখে 'দাদা, কি দিলেন' বলি, স্যান্ডি সাহার লাইভ দেখে 'মালটা পাক্কা ....' বলি। চলুন এবার আমরা একটু জলসঙ্কট নিয়ে কথা বলি। 
জল মানে তো জীবন দাদাভাই/ দিদিভাই। জীবন থাকতে জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে ।


మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: