মহানায়কের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য

২৪ জুলাই, ১৯৮০। বাঙালির জীবনে এক বিষাদময় দিন। চির বিদায় নিয়েছিলেন বাঙালির মহানায়ক উত্তম কুমার। কিন্তু এই মহানায়ক হয়ে ওঠার রাস্তা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। সেই সঙ্গে ছিল সংসারে প্রবল অনটন। তাই প্রথম জীবনে পড়াশোনা শেষ করার আগেই কাজে যোগ দিয়েছিলেন। চাকরি করেছেন পোর্ট ট্রাস্টের ক্লার্কের পদে। তবে সুপ্ত বাসনা কি আর চাপা থাকে! তাই কখনই নিজেদের থিয়েটার গ্রুপ ‘সুহৃদ সমাজ’-এ নিয়মিত অভিনয় করতে ভোলেননি। তবে স্টুডিও পাড়ায় ডাক পড়লেও সেটা খুব একটা সুখের স্মৃতি ছিল না। তকমা লেগেছিল ফ্লপ মাস্টারের। তবে ফ্লপ মাস্টারের তকমা সরিয়ে ‘কামব্যাক’ হয়েছিল ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির মাধ্যমে। তবে সত্যজিৎ ও উত্তমের যুগলবন্দি দর্সকদের উপহার দিয়েছিল ‘নায়ক’ ছবি। উত্তমকুমারকে ভেবেই ‘নায়ক’ ছবি করার কথা ভেবেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘নায়ক’ উত্তমের কেরিয়ারের ১১০তম ছবি। হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর ‘নায়ক’ দেখার পর রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। উত্তমের সঙ্গে দেখা করতেও চেয়েছিলেন তিনি। এলিজাবেথ আসলে মুগ্ধ হয়েছিলেন উত্তমকুমারের অভিনয়ে।  

আবার ১৯৭৬ সাল, তখন জরুরি অবস্থা চলছে। মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে সরিয়ে ‘দেবী দুর্গতিহারিণীম’ নাম দিয়ে এক বিকল্প অনুষ্ঠান হয়। রেডিয়োতে সেই অনুষ্ঠান করেছিলেন উত্তমকুমার। তবে বাণীকুমারের জায়গায় তাঁকে মেনে নেয়নি জনতা। ওই এক বারই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র প্রচার বন্ধ হয়েছিল। উত্তমও সরে দাঁড়ালেন বিনয়ের সঙ্গে। অভিনয় ছাড়াও পরবর্তীতে প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবেও কাজ করেছেন উত্তমকুমার।‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ও ‘চিড়িয়াখানা’য় অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, দু’টি ছোট গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্রেরচিত্রনাট্য লিখেছিলেন উত্তমকুমার। একটি সুবোধ ঘোষ, অন্যটি তরুণ রায়ের লেখা গল্প অবলম্বনে। স্ত্রী গৌরীদেবীর মুখের আদলে বাড়ির লক্ষ্মীপ্রতিমার মুখ তৈরি করিয়েছিলেন উত্তম। প্রথম বছর বাড়িতে এসে কুমোর সেই মূর্তি তৈরি করেন। সেই থেকে ওই রীতিই চালু। এই পুজো উত্তমের খুব পছন্দের ছিল। পেশাগত রেষারেষির খবর তেমন না মিললেও, বাংলা ছবির দুই নক্ষত্র ছিলেন একে অন্যের গুণমুগ্ধ। উত্তম আজও নিশ্চিন্তে চলেন সৌমিত্রের সঙ্গে।

তবে বাঙালি হৃদয়ে আজও মহাায়ক উত্তম কুমারই।

 


Find out more: